এমভয়েস ডেস্ক ঢাকা: কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর (৭১) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ (শনিবার) ২৪ জুলাই বেলা ১১টায় খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় ‘গার্ড অব অনার’।
বেলা ১২ থেকে ১টা ফকির আলমগীরের মরদেহ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জোহরের পর খিলগাঁও মাটির মসজিদে আরেক দফা জানাজা শেষে তালতলা কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত আনুমানিক ১০টা ৫৬ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। এবং ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে গত চার দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এই শিল্পী।
সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর এর মৃত্যুতে মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তার গান তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেমের নবজাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেন, “এ দেশের সংগীতাঙ্গনে, বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
জীবদ্দশায় অগণিত গানে কণ্ঠে দিয়েছেন ফকির আলমগীর। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে শ্রোতাদের মাতিয়েছেন এই শিল্পী।
প্রকাশ পেয়েছে তার ৩০টির মতো অ্যালবাম।
ফকির আলমগীরের গাওয়া বিখ্যাত কিছু গান সবসময় শ্রোতাদের মনকে আন্দোলিত করে।
এক নজরে ফকির আলমগীরের কিছু বিখ্যাত গান-
ও সখিনা
ফকির আলমগীরের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের একটি ‘ও সখিনা গেছোস কী-না ভুইলা আমারে…’।
এই গানটি দিয়ে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন তিনি। সখিনা আবহমান বাংলার প্রেমিকা ও বধূ। কারও কাছে দুঃখিনী পল্লীবালা আবার কারও কাছে আহ্লাদী বোন। এই সখিনা কখনো রিকশাওয়ালার প্রিয়তমা স্ত্রী। কখনও কারখানার শ্রমজীবী নারী, কখনও বা ফুটপাতের ইটভাঙা শ্রমিক।
মায়ের এক ধার দুধের দাম
‘মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম/ পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো’- ফকির আলমগীরের কণ্ঠে আরেকটি কালজয়ী গান এটি। মাকে নিয়ে তার এই গান সকল সন্তানের বুকে নাড়া দেয়। ১৯৭৭ সালে আরিচা ঘাটে এক অন্ধ বাউলের কণ্ঠে প্রথম তিনি এই গানটি শোনেন। তখন তিনি এতটাই আপ্লুত হয়েছিলেন যে, ঢাকায় ফিরে নিজের মতো করে গানটি তৈরি করেন। পরে বিটিভির এক অনুষ্ঠানে সেটি পরিবেশিত হওয়ার পরপরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
নেলসন ম্যান্ডেলা
পৃথিবীর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে ১৯৮৯ সালে এই অসাধারণ কথা-সুরের গানটি কণ্ঠে করেন ফকির আলমগীর। গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়, এমনকি প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশ সফরে আসার পর স্বয়ং নেলসন ম্যান্ডেলাও গানটি শুনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
কাইন্দো না রহমতের মা
এক দুঃখী মাকে সান্ত্বনার দেওয়ার অন্যরকম এক গান ‘কাইন্দো না রহমতের মা’। এই গানটি দিয়ে ভিন্নরকম এক বার্তা দিয়ে গেছেন ফকির আলমগীর। তার কণ্ঠে গানটি বেশ জনপ্রিয়। নানা সময় মঞ্চ ও টেলিভিশনে গানটি গাইতে দেখা গেছে তাকে।
জন হেনরি
শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে পহেলা মে পালিত হয় বিশ্বব্যাপী। এই মে দিবসে বাংলা ভাষায় শ্রমিকদের নিয়ে কোনো গানের কথা এলেই সবার আগেই আসে ‘জন হেনরি’ গানটির কথা। গানটি নিজের কণ্ঠে তুলে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ফকির আলমগীর।
টিএএস এএএম এমএমএইচ/৪