।।মুহাম্মদ মহরম হোসাইন।।
এমভয়েসঃ চট্টগ্রামে ঠিকাদার কতৃক কম পরিমানে নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করার সময় আপত্তি করায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) উপসহকারী প্রকৌশলীকে টেনেহিঁচড়ে নাজেহাল ও গলাটিপে ধরে হত্যার চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে। এব্যপারে ভুক্তভোগী প্রকৌশলী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ইইডি অফিস সূত্র জানাযায়, গত ৩০ অক্টোবর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহসীন অ্যান্ড ব্রাদার্স ও দেশ কনস্ট্রাকশনসের আরসিসি ঢালাইকালে খোয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে বলায় ঠিকাদার মোঃ মহসিন হায়দার ফটিকছড়ি উপজেলা ইইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী বিশ্ব সূত্রধর’কে টেনেহিঁচড়ে সার্ভিস রুমে নিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে চেপে গলাটিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করেন।
এব্যাপারে লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী বিশ্ব সূত্রধর এমভয়েস টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সারদেশে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) নির্মাণ প্রকল্পের একটি ফটিকছড়ি টিএসসি। এটি নির্মাণের কাজ করছে চট্টগ্রামের মোহসিন অ্যান্ড ব্রাদার্স ও দেশ কনস্ট্রাকশনস। ৩০ অক্টোবর সামারদিঘি এলাকার টিএসসির অ্যাকাডেমিক ব্লকের সামনে ও সার্ভিস এরিয়ার সামনে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ থাকায় সকাল ৮টায় সেখানে যাই। শিডিউল মোতাবেক ঢালাই কাজ (১:১:৫:৩ অনুপাতে) শুরু করি। ঠিকাদার মোঃ মহসিন হায়দার আমাকে বারবার অনুপাতের বাইরে ঢালাই কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করার চেষ্টা করতে থাকে। আমি এতে বাধা দিলে তিনি সকাল ১০টার দিকে আমাকে গালাগালি করতে করতে টেনেহিঁচড়ে সার্ভিস রুমে নিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঠেকিয়ে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেন। তার সাইট ম্যানেজার শামসুর রহমান এসে আমাকে উদ্ধার করে। পরে মোঃ মহসিন হায়দার আবারও দ্বিতীয় দফায় গলাটিপে ধরেন ও ব্যাপক মারধর করেন। আমি এর বিচার চাই। পরের দিন ৩১ অক্টোবর আমি স্বশরীলে উপস্থিত হয়ে ফটিকছড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
ঘটনার সত্যতা জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহসীন অ্যান্ড ব্রাদার্স ও দেশ কনস্ট্রাকশনসের ঠিকাদার মোঃ মহসিন হায়দারের ০১৮১৯৩৮৩৯০৯ মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে মোবাইল ব্যস্ত পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগেও কয়েক দফা বিভিন্ন স্থানে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করার আপত্তি তোলায় ঠিকাদারের হাতে মারধর ও হামলার শিকার হন কয়েকজন প্রকৌশলী। এরমধ্যে গত ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় ও বিগত ১৯ জুলাই চাঁদপুরের কচুয়াতে মারধরের শিকার হন ইইডির স্থানীয় উপসহকারি প্রকৌশলী। উভয় ঘটনার ব্যাপারে স্বস্ব থানায় মামলা রুজু করেন ভুক্তভোগী প্রকৌশলীরা।
এদিকে ঠিকাদার ও তাদের নিজস্ব লোকদের হাতে প্রকৌশলরদের নাজেহাল ও মারধরের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইইডি মাঠ পর্যায়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজের তদারককারী প্রকৌশলীদের মধ্যে। ইইডির মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীরাদের ওপর হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানটির ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। এ ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইইডির প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সংস্থাটির ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা।
ইইডির প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার এমভয়েস টুয়েন্টিফোর টকমকে বলেন, প্রকৌশলীদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ব্যাপারে চট্টগ্রামের ডিসি ও এসপির সাথে কথা বলে সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে কি ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছে এমনটি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে। এ ব্যাপারে হামলার শিকার প্রকৌশলীকে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দিতে বলেছি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আআম/এমএমএইচ/৩
৩ নভেম্বর ২০২০ ইং