এমভয়েস ডেস্ক, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২: চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার শাহী জামে মসজিদের উচ্চস্বরে আজানের আওয়াজ বন্ধ করতে শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁনের পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে চলছে তোলপাড়। বিষয়টি প্রচার হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এরমধ্যে নাদের খাঁন দম্পতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মহল্লা কমিটির পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে নাদের খাঁন ও তার স্ত্রীর দাবি, তাদের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কৌশলে তাদেরকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন একটি পক্ষ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পপতি নাদের খাঁন এমভয়েস টোয়েন্টি ফোর ডটকম’কে বলেন, আমরা বলেছিলাম মাইকের আওয়াজ একটু কমাতে। আরা তারা বিষয়টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন। তারা কেন এমন করছেন আমি এটা বুঝতে পারছি না। ইতোমধ্যে সিএমপি কর্মকর্তাদের থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে আমার এখানে এসেছেন। সবাইকে আমি বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, আমরা ১৯৬৩ সাল থেকে এই এলাকায় বসবাস করছি।এতোদিন কারো সাথে কোন বিষয়ে ঝামেলা হয়নি।বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করেছি। সেই এলাকায় রাস্তার দেওয়ালে কোরআন হাদীসের যে লেখাগুলো দেখছেন, সেগুলো আমার স্ত্রীই লিখিয়েছেন। কাজেই ইসলামের প্রতি, আজানের প্রতি তার বিদ্বেষ থাকার প্রশ্নই আসে না।
নাদের খাঁনের স্ত্রী হাসিনা খাঁন এমভয়েস টোয়েন্টি ফোর ডটকম’কে বলেন, আমি হার্টের রোগী।অনেক সময় হঠাৎ মাইকের আওয়াজে আৎকে উঠি। বিশেষ করে মসজিদের ভেতর মাইকের সাউন্ড বাজিয়ে ওয়াজ করা হয়। সেই আওয়াজে অনেকের সমস্যা হয়। আমি সেই কথা বলেছি। আমি সেই চিঠিতে মসজিদে আজান বন্ধ করার কোন বিষয় বলেনি। বলেছি মাইকের সাউন্ড একটু কমাতে। এলাকায় অনেকগুলো মসজিদে থেকে আওয়াজ আসে। তাই এখানের মাইকের আওয়াজ একটু কমলে আজান শুনাতে সমস্যা হবে না। তাই আমি মাইকের আওয়াজ একটু কমাতে অনুরোধ করেছিলাম মাত্র।’
হাসিনা খাঁন বলেন, আমি মদিনা শরীফ থেকে ‘রাসুল ( সা.) এর দুই শত সোনালী উপদেশ’ নামে একটি বই হাদীস গ্রন্থ আনিয়েছি। সেই হাদীসগুলো আমি জাকির হোসেন রোডের বিভিন্ন রাস্তায় লাগিয়েছি।শাহী মসজিদের ভেতরেও লাগিয়েছি। এগুলো দেখভাল করার জন্য দুইটি লোকও রেখেছি।আমি পর্দা মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এমনকি আমি টেলিভিশন পর্যন্ত দেখিনা। এখন সেই চিঠিকে কেন্দ্র করে তারা আমাকে নাস্তিক বলে প্রচার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপবাদ দিচ্ছে। মুল কথা হলো, এলাকায় নারীদের নিয়ে আমি বিভিন্ন সুন্দর কাজ করছিলাম। এটা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিংসা করতো। বিশেষ করে মহল্লা কমিটির সেক্রেটারি মুক্তি সাহেব আমাদের ভালো কাজে সন্তুষ্ট ছিলো না। যে কারণে একটু সাধারণ বিষয়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বাড়াবাড়ি করছেন তারা।
তবে পূর্ব নাসিরাবাদ মহল্লা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন খাঁন বলেন, এই পরিবারটি ধর্মকর্ম মানেন না। আর সেটা একান্ত তাদের বিষয়। কিন্তু তারা তো এভাবে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারেন না। উনারা এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। এখন উদ্ভট একটা চিঠি লিখে সবাইকে বিলি করছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী তাদের উপর প্রচণ্ড পরিমাণে বিরক্ত।’
প্রসঙ্গত, চিটাগং ক্লাবের সভাপতি ও পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খাঁনের পরিবার পাকিস্তান আমল থেকে খুলশী জাকির হোসেন রোড এলাকায় বসবাস করে আসছেন। বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকার প্রধান শাহী জামে মসজিদে আজানের সময় উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৪ ডিসেম্বর পূর্ব নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদের সেক্রেটারি বরাবরে লিখিত একটি চিঠি পাঠান তারা।
শিল্পপতি নাদের খাঁন ও তার স্ত্রী হাসিনা খাঁন চিঠিতে লিখেছেন- ‘আপনার নিকট এবং কমিটির অন্যান্য সম্মানিত সদস্যের নিকট বারবার অনুরোধ করেও এই পর্যন্ত শোনার ও বোঝার চেষ্টা করছেন না। আমাদের এই এলাকায় একই সাথে ৮-৯টি মসজিদ হতে আযান শোনা যায়। অথচ আপনারা কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন যে, আপনারা যেহেতু দূরে থাকেন, শোনার সুবিধার জন্য মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে রাখেন। এই বিষয়টি আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না।’
চিঠিতে লেখা হয়, ‘শুক্রবারে মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ওয়াজ প্রচার করা হয়। আপনাদের অনুরোধ করেছি- এই আওয়াজ আপনারা মসজিদের ভেতরে রাখেন। কিন্তু এই পর্যন্ত তাও হলো না! অনেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অসুবিধা হতে পারে, অসুস্থ লোকের অসুবিধা হতে পারে- অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে- সবচেয়ে বড় কথা বিকট আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না।’
মসজিদের আজানের আওয়াজ মসজিদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে লেখা সেই চিঠিতে তারা মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছেন- ‘আপনারা যদি আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন, তবে সব ধরনের সহযোগিতা থেকে আমরা বিরত থাকবো।’
টিএএস/এসআই/এমএমএইচ/৩